DurgapurUpdate

Durgapur Update 24 X 7 bengali news portal


Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, September 15, 2022

সরকারি শৌচালয়েই থাকা-খাওয়া জীবনযাপন দুর্গাপুরের এক পরিবারের


দুর্গাপুর আপডেট নিউজ ডেস্ক : বাতাসে পুজোর গন্ধ আনন্দে মাতছে শহরবাসি। তারই মাঝে অন্য এক চিত্র শহর দুর্গাপুরে শৌচালয়ই ঘর থাকার আস্তানা মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাথরুমের মধ্যেই রান্না আর তাতেই খাওয়া দাওয়া দুর্গাপুরের মত আধুনিক শহরে সাংস্কৃতিক শহরে এ কেমন অমানবিক চিত্র?

কলকাতার পরেই আধুনিক শহরের নাম উঠে আসে দুর্গাপুরে। গর্ব করে আমরা শিল্প শহর বলি। সংস্কৃতি শহর বলি। মানবিক শহরের কথা সবসময় আমরা প্রচার করি। কিন্তু একটা ছবি যেন এই গর্ব কে মান করে দেয় কয়েক মুহূর্তে । মাথা নিচু করে দেয় শহরের। 

 দিনের পর দিন নয়,মাসের পর মাস – সরকারি শৌচালয়েই সপরিবারে বসবাস।

 শহর দুর্গাপুরের ‘ক্যাপিটাল’ সিটি সেন্টারে। কোভিডে কাজ হারানো ছিন্নমূল এক দাদু দিদা আর তাদের কচিকাচা দুই নাতি,নাতনি। তিন ভূবনেও ঠাঁই মেলেনি,কাজ জোটেনি। তাই ঠিকেয় শৌচালয় সাফাই আর তার ভেতরেই ঘর সংসার। 

ঝকঝকে শপিং প্লাজা আর ঝাঁ চকচকে সারি সারি রেস্টুরেন্ট,পানশালা,কেক্ শপ।  সড়ক বরাবর বইছে অবাধ নগর জীবনের বেপরোওয়া স্রোত। বাতাসে বিরিয়ানি,মাটন্-কষার খসবু আর হুইস্কি – রামের বেয়াড়া ঝাঁঝ। গজিয়ে ওঠা ধাবার বাইরে সেপ্টেম্বরের ঝমঝমে বৃষ্টি ।  দুর্গাপুর নগর নিগমের তৈরী ‘পে এ্যান্ড ইউজ্’ সুলভ শৌচালয়! - এটাই যে ছ’বছরের মিষ্টি সাউ,পাঁচ বছরের সাবির সাউদের ঘরবাড়ী। একমাত্র ঠাঁই-ঠিকানা,গত দেড়টি বছর ধরে। শৌচালয়ের ভেতরেই তাদের খাওয়া-দাওয়া, শোওয়া-বসা, বিছানা পাতা, ‘অ-আ- ক- খ’র পাঠশালা। দাদু লক্ষ্মণ চ্যাটার্জি আর দিদা কাত্যায়নীই তাদের মাস্টার  আর দিদিমনি, স্কুলে যেতে চাই এরা। কিন্তু কিভাবে এটা  বড় প্রশ্ন।
লক্ষ্মণ বাবু বলেন বাড়ী ছিল কাঁকসার আড়া গ্রামে। শরিকেরা সব কেড়ে তাড়িয়ে দিয়েছে । সেই থেকে এই সিটি সেন্টারেই আমরা স্বামী –স্ত্রীতে কাজ করতাম একটা রেস্টুরেন্টে। ওখানেই এই বাচ্চা দুটিকে নিয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কোভিডের সময় সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। তারপর থেকে বেকার। পুরসভা এই শৌচালয়টা উদ্বোধন করার পর ঠিকাদার এখানে দেখভালের কাজে রাখলেন। থাকার কোনো জায়গাই নেই। তাই,ওনাকে অনুরোধ করে পরিবার নিয়ে এখানেই থেকে গেলাম। অফার পা নিয়ে কাজ করতে পারি না গন্ধ বাথরুমের দরজার পাশে খেতে খেতে  বললেন।
 লোকে সারাদিন শৌচকর্ম করতে আসছে। দুর্গন্ধ আর মানুষের মল-মূত্রের মাঝে এভাবে বসবাসে অসুবিধা হয় না? 
কাত্যায়নীর উত্তর- ব্রাক্ষ্মণ পরিবারের মানুষ আমরা। এভাবে কি থাকতে পারি? খুবই কষ্ট হোত। দেড় বছরে আস্তে আস্তে সবকিছুই স’য়ে গেছে। এখন আর কোনো কিছুতেই অসুবিধা হয় না। 
প্রশ্ন করি মিষ্টি আর সাবিরের বাবা - মা কোথায়?
লক্ষ্মণের জবাব- ওদের জন্মদাতারা ওদের ছেড়ে চলে গেছে, তাই আমরাই দেখভাল করি এই দুজনের। মারধর করতো। আরেকটা মহিলাকে ঘরে নিয়ে আসে। তারপর একদিন এই দুটো বাচ্চার সাথে আমার মেয়েকে ট্রেনে চাপিয়ে দেয়। 
প্রশ্ন- তাহলে মিষ্টি, সাবিরের পদবী তো মুখার্জী। সাউ বলছেন কেন? 
কাত্যায়নীর জবাব- দিল্লি থেকে এসে ওই রেস্টুরেন্টেই ওঠে মেয়ে। তারপর হটাৎ পানাগড়ের লাল্টু সাউ বলে একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে বসল। বাচ্চাগুলোকেও নিয়ে গেল। কিছুদিন পরেই লাল্টু এই বাচ্চা দুটোকে আর সহ্য করতে পারছিল না। রোজ মারধর শুরু করে। আমরা বাচ্চাগুলোর দাদু- দিদা। সইতে না পেরে নিয়ে চলে আসি। 

নিয়ে চলে এসে সটান শৌচালয়ে। সিটি সেন্টারের সরকারি ‘বাবু পাড়া’র এই সরকারি শৌচালয়ে। এই শৌচালয়ই এখন ঘরবাড়ী ছিন্নমূল,উদ্ভ্রান্ত লক্ষ্মণ চ্যাটার্জী, কাত্যায়নী আর দুই ‘অনাথ’ মিষ্টি,সাবিরের। নগর সভ্যতার এই ‘কলঙ্ক’ শৌচালয়ের নোংরা জলে মুছে যায়নি, আরো বেশি দগদগে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দিন কে দিন। 

শরতের কাশবনে ‘পথের পাঁচালী’র ভাই-বোন অপু-দূর্গার সেই চির ভাস্বর ছবি বাঙালীর হৃদয়ে গাঁথা। আর এবছরের অন্য এক শরতেই সাবির-মিষ্টির ‘কাছ-ছাড়া’ হওয়া মানতে কষ্ট আগস্তিরও। বললেন, “সত্যিই তো। আমরা কি কিছুই করতে পারবো না এদের জন্য”?

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot